Print

ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ (বাসস) : অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ঘিরে জ্ঞানের রসদ সংগ্রহের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এখন পরিণত হয়েছে সাংস্কৃতিক বিনোদনের কেন্দ্রে। একদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা, অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে নাটক, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্যসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাসব্যাপী পরিবেশনা। এছাড়া বাংলা একাডেমির বইমেলা তো আছেই।
আর তাই বিকেল হলেই নগরীর সংস্কৃতিপ্রেমী বাসিন্দারা এসে ভিড় করছেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। অবরোধ-হরতাল কোন কিছুই মুক্তচিন্তার এ মানুষদের গৃহকোণে আটকে রাখতে পারছে না। তাই প্রতিদিনের মত আজ নবম দিনেও মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর প্রচুর সমাগম ঘটেছে। বইয়ের বিক্রিও হচ্ছে ভাল। প্রকাশকরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছরের মেলার প্রথম শুক্র ও শনিবার বেচাকেনা হয়েছে ব্যাপক।
আজ নবম দিনে মোট বই এসেছে ১২৯টি। এর মধ্যে কবিতার বই সবচেয়ে বেশি, ৩৬টি। এছাড়া এসেছে গল্প ২১টি, উপন্যাস ১৭টি, প্রবন্ধ ৯টি। মেলার নজরুল মঞ্চে আজ নতুন ৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত মেলায় দুই শতাধিক কবিতার বই এসেছে। এ প্রসঙ্গে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, বহমান দুঃস্বপ্নের ধারার মধ্যে কবিরাই স্বপ্ন দেখাতে পারেন। একই সঙ্গে দৈশিক ও বৈশ্বিক অনুভব ও অঙ্গীকারকে ধারণ করে তারাই পারেন মানবিক পৃথিবীর স্বপ্নকে বাস্তব করতে।
কবি নুরুল হুদা বলেন, বাংলাদেশের কবিতা ব্যক্তিগত অনুভব এবং সামষ্টিক অঙ্গীকার উভয় সত্যকে ধারণ করে নতুন শতকের নতুন দশকের ভাষা ও আঙ্গিকে প্রকাশমান।
মেলার উল্লেখযোগ্য নতুন বইয়ের মধ্যে আজ ঐতিহ্য থেকে এনেছে মুহাম্মদ জালালউদ্দীন বিশ্বাসের ভাষান্তরিত বিদ্যাভাস্করের শেরশাহ সূরী, মাহবুব কবিরের আয়নার দিকে, আনিফ রুবেদের এসো মহাকালের মাদুরে শুয়ে পড়ি ও হাসান খুরশীদ রুমী অনুদিত আইজ্যাক আজিমভের দ্য বুক অব ফ্যাক্টস- ২, বিভাস এনেছে হামিদুল আলম সখা ও রাজশংকর দেবনাথের লেখা নির্মলেন্দু গুণ : দ্রোহী ও বিদ্রোহী।
গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে আজ অনুষ্ঠিত হয় প্যারীচাঁদ মিত্রের দ্বিশততম জন্মশতবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. আমিনুর রহমান সুলতান এবং ড. মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।
প্রাবন্ধিক বলেন, উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র ছিলেন স্রষ্টা এবং কর্মযোগী মানুষ। তার জন্মের পর দুশো বছর অতিক্রান্ত, মৃত্যুর পরও আমরা পেরিয়ে এসেছি একশো বত্রিশ বছরÑতবু বাংলাভাষী মানুষের কাছে এখনো তিনি এক স্মরণীয় নাম। ভাষাবিদ্রোহী, সমাজনিষ্ঠ কথাকার, মানবউন্নয়ন সংগঠন, সাংবাদিক, অধ্যাত্মচিন্তকÑনানাভাবে তাঁকে আমরা স্মরণ করতে পারি।
মূলমঞ্চে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তামান্না তিথি’র পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘কল্পরেখা’ এবং আবুল ফারাহ্ পলাশের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটি’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
আগামীকালের অনুষ্ঠান
আগামীকাল বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নব্বইতম জন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম এবং ড. এম. অহিদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন কমরেড অজয় রায়।